গরুর মাংস!! জেনে নিন এর সুফল ও কুফল।
গরুর মাংস অতি শক্তিশালী ও পুষ্টিকর একটি খাবার। গরুর মাংস অনেক স্বাদের এবং অনেকের কাছেই খুব প্রিয়। গরুর মাংস স্বাদে অতুলনীয় এবং পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ। স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করলে যে কোনো খাবারই সতর্কতার সঙ্গে গ্রহণ করতে হয়। এই খাদ্যের মধ্যে মজুদ পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে। তবে পুষ্টি উপাদান বেশি হওয়ার ফলে অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এবং বেশ কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ চিহ্নিত হওয়ায় খাবারটি প্রিয় হলেও অনেকে এড়িয়েও চলেন। তাই চলুন, জেনে নিই এই খাদ্যের সুফল ও কুফলগুলো।
সুফলঃ
পুষ্টি : গরুর মাংস প্রোটিনজাতীয় খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। প্রাণী থেকে সংগৃহীত হয় বলে এটি প্রাণিজ প্রোটিন। প্রোটিন ছাড়া আরো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান গরুর মাংসে বিদ্যমান।
প্রোটিন : গরুর মাংস থেকে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন পাওয়া যায়। মাংস ছাড়াও হাড়, কলিজা, মগজ ইত্যাদি থেকেও প্রোটিন চলে আসে। গরুর মাংসের প্রোটিন থেকে যে অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়, তা হাড় ও মাংসপেশির কাজে অনেক সাহায্য করে থাকে। ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ২২.৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
ফ্যাট : গরুর মাংসে অনেক সম্পৃক্ত চর্বি থাকে। ফ্যাটের উপস্থিতির জন্য গরুর মাংস অনেক মজাদার হয়ে থাকে। কচি মাংসে এই ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ফ্যাট রয়েছে ২.৬ গ্রাম।
মিনারেলস : এক টুকরো গরুর মাংসে অনেক ধরনের মিনারেল পাওয়া যায়। বিশেষ করে জিংক, আয়রন, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও কপার। এই মিনারেলগুলো শরীরের অনেক প্রয়োজনীয় কাজ করে থাকে। জিংক আমাদের শরীরের কোষ রক্ষণাবেক্ষণ এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে। বলা হয় তিন আউন্স পরিমাণ গরুর মাংস দৈনিক জিংকের ৩৯% চাহিদা পূরণ করে থাকে।
জিংক : যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ফসফরাস : যা মজবুত হাড় ও দাঁতের জন্য জরুরি।
আয়রন : যা রক্তস্বল্পতা দূরীকরণ এবং শরীরের সব কোষে অক্সিজেন সরবরাহে সাহায্য করে।
ভিটামিন : গরুর মাংসে অনেক রকম ভিটামিন থাকে, বিশেষ করে বি১২ বি৬ রিবোফ্ল্যাবিন ও বি১২-এর প্রয়োজনীয়তা অনেক, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায়ও এর প্রয়োজনীয়তা অনেক। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের মতে, দৈনিক ২.৪ মিলিগ্রাম বি১২ লাগে। তিন আউন্স গরুর মাংস বি১২-এর দৈনিক ৩৭% চাহিদা পূরণ করতে পারে। তিন আউন্স গরুর মাংস ফসফরাস, ভিটামিন বি১২, প্রোটিন, জিংক ও সেলেনিয়ামের খুবই ভালো উৎস। তিন আউন্স কচি গরুর মাংসে আয়রন, নায়াসিন, বি৬ ও রিবোফ্ল্যাভিন পাওয়া যায়।
[উৎস : ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার রিসার্চ সার্ভিস ২০০২]
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত প্রেশার চেক করুন!
কুফলঃ
গরুর মাংসে রয়েছে কোলেস্টেরল, সোডিয়াম ও ফ্যাট, যা অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের মতো বেশি পাওয়া যায়। অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে রক্তে চর্বির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে গরুর মাংসের ঝোল বা স্টক থেকে প্রচুর সম্পৃক্ত চর্বি পাওয়া যায়, যা রক্তনালিতে জমে এথেরোসক্লেরসিস ঘটাতে পারে। যা থেকে পরবর্তীকালে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
গরুর মাংসের অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিতে বা বাড়াতে সোডিয়াম সাহায্য করে। তাই অতিরিক্ত গরুর মাংস ঘন ঘন খেলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে, যা হৃদরোগ, স্ট্রোক বা কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, যা থেকে পরবর্তীকালে আরো অনেক রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
গরুর মাংস প্রথম শ্রেণির প্রোটিনের ভালো উৎস। তাই অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে তা থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়।
যেকোনো খাবারের ভালো-খারাপ দুটো দিকই থাকে। অতিরিক্ত খেলে অতিরিক্ত পুষ্টি পাওয়া যায়, আবার কম খেলে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকে। তাই সুস্থ থাকার লক্ষ্যে সবাইকে সুষম খাবারের পরামর্শ দেওয়া হয়। সব রকম খাদ্যই স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে রান্না করে পরিমাণ বজায় রেখে খেলে যেকোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে সুস্থ থাকা সম্ভব।