রোজার খাদ্যাভাস। কি খাওয়া উচিৎ, কি খাওয়া উচিৎ নয়!!

বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজান মাসে খাদ্যাভ্যাস জনিত কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। সারাদিন রোযা রাখার পর ইফতারিতে অতিরিক্ত ক্যালরি ও তৈল-মসলাযুক্ত খাবারের ফলে এ সমস্যা হয়ে থাকে। তাই এসময় খাবার গ্রহণের দিক থেকে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। সারাদিন রোযা পালনের ফলে সারাদিনের খাবার একবারে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। অন্যান্য সময় প্রতি বেলায় যতটুকু খাবার খাওয়া হতো রোযার সময়ও তা মেনে চলতে হবে। একজন লোকের সারাদিনে যতটুকু ক্যালরি প্রয়োজন হয় ইফতারিতেই তার সম্পূর্ণটা পূরণ হয় যায়। কেননা ইফতারিতে যেসকল খাবার খাওয়া হয় তার সবগুলোই ক্যালরিবহুল। যেমন –

  • ২৫ গ্রাম ছোলা ভাজা ৯২ ক্যালরি

  • পেঁয়াজু দুটি ১০০ ক্যালরি

  • এক কাপ হালিম ২০০ ক্যালরি

  • ১০০ গ্রামের একটি কাবাব ১৭০ ক্যালরি

  • জিলাপি একটি বড় ২০৩ ক্যালরি

  • এক গ্লাস শরবত ৮০-১০০ ক্যালরি

  • এক কাপ মুড়ি ৬০ ক্যালোরি

  • দুটি খেজুর ১৪৪ ক্যালরি

    f3b53c76 608e 45e0 826d

উপরোক্ত তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র ইফতারিতেই ১১০০ থেকে ১২০০ ক্যালরি আমরা গ্রহণ করি। এত ক্যালরি বহুল খাবার ওজন বাড়ানো ছাড়াও পেটের নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য ইফতারিতে হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত। অনেকে ভাবেন ইফতারিতে বেশি করে খেয়ে সন্ধ্যা রাতে আর খাবেন না। এ ভাবনা ঠিক নয়। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের হাইপোগ্রাইসেমিয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। আবার অনেকে ইফতারি খাওয়ার রাত ১ টা ২ টার দিকে খেয়ে শুয়ে পড়েন। সেহরির সময় হলে এক গ্লাস পানি খেয়ে শুয়ে পড়েন। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ ও ডাক্তারী মত কোনোটাই এটিকে সমর্থন করে না। সুস্থ্য থাকতে হলে তিন বেলাই খেতে হবে।

রোযার দিনে পানিশূন্যতার সমস্যাটি বেশি দেখা দেয়। তাই ইফতারে পানির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শরবত পান করলে সারাদিনের পানিশূন্যতার অভাব দূর হয়। সরবতের উপকরণগুলোর মধ্যে রয়েছে কাগজি লেবু, বেল, ফলের রস, স্কোয়াশ, তেঁতুল, দই, চিঁড়া, ইসপগুল ইত্যাদি। ডাবের পানিও শরবত হিসেবে খাওয়া যায়। তোকমা ও ইসপগুলের শরবত বেশ ঠান্ডা। এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য, অন্ত্র ও পাকস্থলীর প্রদাহ, পেটের গোলমাল ইত্যাদিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। বেলের শরবতও ভালো। এতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-সি রয়েছে প্রচুর। যেকোনো ফলের রস ভিটামিন ও খনিজ লবণের অভাব মেটাতে পারে।

food ramadan

ইফতারিতে ডালের তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবারের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন – মটর, ছোলা, বেসন, ডালের বড়া,হালিম প্রভৃতি। এগুলো প্রচুর প্রোটিন, খাদ্যশক্তি ও শর্করা সমৃদ্ধ। ঠিক একই খাদ্যগুণ রয়েছে মাছ ও মাংসে। অনেকে মনে করেন সেহরিতে মাছ, মাংস না খেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। এর ফলে অনেকেই প্রতিদিন সেহরিতে মাছ, মাংস খেয়ে থাকে। কিন্তু এ ধারণা ভুল। ইফতারিতেই আমরা প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান খেয়ে থাকি। তাই মাছ, মাংসের পাশাপাশি সবুজ-শাকসবজিও খাওয়া একান্ত জরুরি।

সর্বোপরি অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার কমিয়ে দিয়ে সহজপাচ্য ও জলীয় খাবার খেতে পারলে ভালো হয়। এ সময় অনেকের মধ্যে পানিশূন্যতা দেখা যায়। এ জন্য ইফতারিতে ভেজা চিঁড়া, দই, চিঁড়ার পোলাও, দুধ-সেমাই, পায়েস, নরম খিচুড়ি খেলে ভালো হয়। পাশে দুটি তালিকা দেওয়া হলো।

ক্যালোরি—১৪০০

ইফতার:

  • ছোলা ভাজা আধা কাপ = ৮০ গ্রাম

  •  পেঁয়াজু দুটি ছোট

  • বেগুনি একটি

  • মুড়ি এক কাপ

  • খেজুর দুটি

  • ফল যেকোনো একটি

  • শরবত এক গ্লাস

  • হালিম এক বাটি (সুপের)

  • আলুর চপ দুটি

সন্ধ্যা রাতে:

  • ভাত এক কাপ = ১২০ গ্রাম,

  • মাছ অথবা মাংস এক টুকরা = ৩০ গ্রাম,

  • সবজি ইচ্ছামতো

     

সেহরিতে:

  • ভাত দুই কাপ

  • মাছ অথবা মাংস এক টুকরা = ৩০ গ্রাম

  • ডাল এক কাপ

  • সবজি ইচ্ছেমতো

  • দুধ আধা কাপ

ক্যালোরি ২০০০

ইফতার:

  • ছোলা ভাজা ৩/৪ কাপ = ১২০ গ্রাম

  • পেঁয়াজু তিনটি ছোট

  • বেগুনি দুটি

  • মুড়ি দুই কাপ

  • খেজুর দুটি

  • শরবত এক গ্লাস

  • ফল যেকোনো একটি

  • হালিম দুই বাটি (সুপের)

  • আলুর চপ দুটি

food ramadan 1

সন্ধ্যা রাতে:

  • ভাত আড়াই কাপ = ৩০০ গ্রাম

  • মাছ অথবা মাংস দুই টুকরা = ৬০ গ্রাম

  • সবজি ইচ্ছেমতো

সেহরিতে:

  • ভাত তিন কাপ = ৩৬০ গ্রাম

  • মাছ অথবা মাংস দুই টুকরা = ৬০ গ্রাম

  • ডাল এক কাপ

  • সবজি ইচ্ছেমতো

  • দুধ এক কাপ

*****আমাদের লেখাগুলো ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না*****

Leave a Reply

Main Menu