সজনে ও সজনে পাতার সুপার ফুডের অন্তত ছয়টি গুণাগুণ ও উপকারিতা!

আপনারা অনেকেই অতি পরিচিত এই গাছটির নাম শুণেছেন ও আপনার বসত বাড়ির আশে পাশে দেখেছেন আবার অনেকে বর্তামানে  সমায়ে বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করে গাছটির ফল বাজার জাত করে অনেক আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

আসুন আমরা এবার গাছটির সাথে আবারও পরিচয় হয়ে নেই, উক্ত গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম মরিংগা ওলেইফেরি (Moringa Oleifera)। ইংরেজিতে গাছটিকে মিরাকলট্রি বা অলৌকিক গাছ নামেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।বাংলায় বলা হয়ে থাকে সজনে গাছ।

আসুন এবারে জানা যাক এই গাছে থাকা পাতার গুণা গুণ সম্পর্কে, এই গাছের প্রতি গ্রাম পাতায় গাজরের চারগুন বেশি  ভিটামিন এ, দুধের চেয়ে ৪ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কলার চেয়ে ৩ গুণ বেশিপটাসিয়াম, কমলালেবুর চেয়ে সাতগুণ বেশি ভিটামিন, দইয়ের চেয়ে ২ গুণ বেশি প্রোটিন আছে।

cover 1535790881 1614670645

আসুন এবার সজনে গাছের সম্পর্কে জেনে নেই  চার হাজার বছর ধরে রন্ধন এবং নানা চিকিৎসায় এ গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রায় ৩০০ রকমের অসুখের চিকিৎসা হয় এইগাছ দিয়ে। দক্ষিণ এশিয়ায় বহু বছর ধরে বাড়ির আনাচে-কানাচে, বনে-জঙ্গলে, পুকুরের ধারে এই গাছ দেখা যায়। সম্প্রতিসেনেগাল, মালির মতো আফ্রিকান দেশগুলোতে এর চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। চাষও খুব সহজ। গাছের একটা ডাল পুতে দিলেইহলো। এই গাছ বাড়েও খুব দ্রুত। দুই তিন বছরে ফুল দেয়। এর ফুল, পাতা, ফল সব কিছুই সুস্বাদু।এতক্ষণ যে বিস্ময়গাছটিরগুণগান করা হলো তার বাংলা নামটা চেনেন না, এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। চেনা জিনিসের মূল্য হয়তো আমরা কম দেই, কিন্তু সারা বিশ্বই আজ এই গাছ নিয়ে গবেষণা করছে, এই গাছের জয় জয়কার চারদিকে।আমরা হয়তো কম-বেশি সবাই সজিনার ডাল বা তরকারি খেয়েছি। কিন্তু সজনে পাতাও যে শাক হিসেবে খাওয়া যায়, এটা সবাইজানি না। তেল-রসুন দিয়ে রান্না সজিনে খেতে শুধু সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিকরও।

সজিনা পাতা ও সজিনাতে প্রচুর আঁশ আছে, যাখাদ্যনালী ও অন্ত্রের পরিপাক তন্ত্রকে পরিষ্কার করে। বিশেষ করে তৈলাক্ত অনেক খাবার আমরা খাই, যার তেল রক্তনালীতেআটকে থাকে। সেগুলো বের করতে সজিনা সাহায্য করে। সজিনার মধ্যে আইসোথিয়োকাইনেটস নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানআছে,  যা গ্যাস্ট্রিক, আলসার এবং গ্যাস্ট্রিকজনিত ক্যানসার ঠেকাতে সহায়তা করে।পানি বিশুদ্ধ করতে আমরা প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম নানা পদ্ধতি ব্যবহার করি। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সজিনার দানাপানি বিশুদ্ধকরণে সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক উপায়। উপস্যুলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা সন্দর্ভে বলাহয়েছে, সজিনার দানা পানি দূষণ রোধ করে, পানিতে কোনো রকম দূষণীয় ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কোনো অণুজীব উপদানদ্রবীভূত হতে দেয় না।<lআমেরিকা, নামিবিয়া, ফ্রান্স ও বতসোয়ানার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সজিনার আণবিক্ষণিক প্রোটিন উপাদান পানি বিশুদ্ধকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। একইভাবে সজিনা শরীরকে বিশুদ্ধ রাখে।সজিনাকে আজকের বিশ্বে ‘সুপার ফুড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

ea0960ffd73c204871a5ba9f555df476

এবারে আসুন  এই সুপার ফুডের অন্তত ছয়টি গুণ আছে, যা একে তারকাখ্যাতি দিয়েছে-

১. পুষ্টির ভান্ডার : লেখার শুরুতেই সজিনার পুষ্টি গুণের কথা বলা হয়েছে। প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি এতে আয়রনও আছে। আয়রনের দিক থেকে এটি পালং শাকের চেয়ে ৫ গুণ বেশি শক্তিশালী।

২. এন্টি-অক্সিডেন্টের খনি : সজিনার পাতাকে এন্টি-অক্সিডেন্টের খনি বলা যায়। এর মধ্যে ভিটামিন সি, বেটা-কেরোটিন, কিউরেকটিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড বিদ্যমান। উল্লেখ্য, এসব উপাদানই মানবদেহের জন্য উপকারী। বিশেষ করে, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড রক্তের চাপ ও শর্করা কমাতে বিশেষ কাজে দেয়।  এশিয়ান প্যাসিফিক জার্নাল অব ক্যানসার প্রিভেনশনদারি করছে, সজিনার পাতায় বিদ্যমান এন্টি-অক্সিডেন্ট ক্যানসার কোষ সৃষ্টিতে বাধা দেয়।

৩. ডায়েবেটিস প্রতিরোধক : এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং আইসোথিয়োকাইনেটস নামের উপাদানগুলো নিয়মিত গ্রহণে ডায়েবেটিসকমে যায়। প্রতিদিন মাত্র ৫০ গ্রাম সজিনার পাতা খেয়ে ডায়বেটিস ২১ শতাংশ হ্রাস পায়। তিন মাস এক চা চামচ করে সজিনারপাতার গুড়া খেয়ে ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিকসকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আজই সংগ্রহ করুন ব্লাড গ্লুকোজ মনিটর/ডায়বেটিকস মেশিন। 

৪. তেলেসমাতি : সজিনার বীজের তৈরি তেলে সত্যিই তেলেসমাতি আছে। অন্য যেকোনো ভেজিটেবেল অয়েল-এর চেয়ে এরগুণাগুণ বেশি। দীর্ঘদিনের লিভারের রোগীর জন্য এ তেল খুব উপকারী। সজিনা গ্রহণে খাদ্যের গুণগত মান অটুট থাকে।পচনশীল খাবারকে দীর্ঘস্থায়ীত্ব দিতেও সজিনার তেলের তুলনা নেই। বাতের ব্যথা-বেদনায় যেমন ব্যবহার করা যায়, তেমনিশীতের আর্দ্রতা থেকে ত্বককে রক্ষা করা, রূপচর্চাতেও এই তেল কাজে লাগে।

৫. কোলেস্টেরল কিলার : ঘাতক কোলেস্টেরলকে হত্যা করে সজিনা আপনার হৃদপি-ের বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। থাইল্যান্ডেবহু বছর ধরে সজিনাকে হৃদরোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ৩ মাসের ব্যবহারে এটি কোলেস্টেরল লেভেল অর্ধেকেনামিয়ে আনতে পারে।

৬. আর্সেনিক দূষণ আর নয় : পানিতে আর্সেনিক দূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এই সমস্যা নিরোধে সজিনার বীজ কিংবা পাতাভূমিকা রাখে। এমনকি আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করতে সজিনা বীজ বা পাতা ব্যবহার কার্যকরী।

KAMA January2020 BlogInternalImage 10 Ways Moringa Oil Helps You Maintain A Healthy Skin What is Moringa Oil 600x600 1024x1024 1

এত উপকারী এবং সহজে প্রাপ্য সজিনার ব্যবহার এখনো আমাদের কাছে সীমিত পরিসরেই রয়ে গেছে। সজিনার ডাল আরতরকারির পাশাপাশি খুব সহজেই এর কচিপাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। পালং, মূলা শাকের মতোই এটিকে রান্না করা যায়।এমনকি সালাদে টমেটো, শসার সঙ্গে সজনে পাতা ব্যবহার করা যায়।যেকোনো স্যুপেও কয়েকটি সজিনা পাতা বাড়তি স্বাদ আরপুষ্টি এনে দেবে। পাতা গুঁড়া বা বীজের তেল অবশ্য আমাদের দেশে সেভাবে ব্যবহৃত হয় না। সজিনার তেল অবশ্য বেশ দামি, অলিভ অয়েলের চেয়েও। আমরা চাইলে সজিনার তেল ও গুঁড়াকে বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত করার কথা ভাবতে পারি। ইউনানী ওআয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বহু বছর ধরেই এর ব্যবহার চলে আসছে। আমরা নতুন করে এই সুপার ফুড আর বিস্ময়কর বৃক্ষের কথা ভাবতেপারি।

Leave a Reply

Main Menu