ভালোবাসার সুখগুলো
আইরিশ অভিনেত্রী ম্যালানি ক্লার্ক বলেছিলেন, “আমরা কোনোভাবেই ভালোবাসার ওপর মূল্য নির্ধারণ করতে পারি না, কিন্তু ভালোবাসার জন্য দরকারি সব উপকরণের ওপর মূল্য নির্ধারণ করতেই হবে”। ভালোবাসা অনেক পবিত্র একটি অনুভূতি। স্বার্থসিদ্ধির জন্যও প্রেম করা উচিত নয়। প্রেম হচ্ছে পৃথিবীর মধুরতম সম্পর্ক যেখানে থাকবে না কোনো চাওয়া-পাওয়া, থাকবে না কোনো স্বার্থ, থাকবে শুধুই ভালোবাসা। যে কাউকেই ভালোবাসা যায়। ভালোবাসার প্রকারভেদ নিয়ে আরেকদিন না হয় লিখবো। আজ শুধু ভালোবাসার সুখগুলোই খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। আদতে যদিও ভালোবাসায় সুখের কোন সংজ্ঞাই হয়না, তেমনি ভালোবাসার সুখ খুঁজে বের করাটাও যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বিখ্যাত লেখক শরতচন্দ্র বলেছিলেন- সত্যিকারের ভালবাসার তার পাত্র বা পাত্রীকে সুস্থ্য ও সুখী দেখতে চায়। কারণ, শুধু ভালোবাসা এবং যত্ন দিয়েই মরুভূমিতেও ফুল ফোটানো যায়।
ভালবাসা তালাবদ্ধ হৃদয়ের দরজা মুহূর্তে খুলে দেয়। এবং এটাই হলো ভালোবাসার আসল জোর। মন থেকেই কাউকে খুঁজুন এবং তাকেই বেছে নিন। যে কিনা আপনাকে পেয়ে গর্ব বোধ করে। আপনাকে হারানোর ভয়ে ভীত থাকে। আপনার ইচ্ছা গুলোকে পূরণ করার প্রচেষ্টায় থাকে। আপনাকে সম্মান করে আপনার যথেষ্ট যত্ন করে। আপনার না বলা অনেক কিছুই যেন সে বুঝে ফেলে। ছোট ছোট কারনে রাগ অভিমান আর ঝগড়া করে। আপনার দোষ, গুণ, ভালো, মন্দ লক্ষ্য করে। যে আপনার ভালো কে ভালো, এবং খারাপ কে খারাপ-নির্দ্বিধায় বলে ফেলে; সে সত্যিকার অর্থেই আপনাকে ভালোবাসে এবং আপনাকে সে সুখী দেখতে চায়। লেখক নিমাই ভট্টাচার্য বলেছিলেন, সোনায় যেমন একটু পানি মিশিয়ে না নিলে গহনা মজবুত হয় না, সেইরকম ভালবাসার সঙ্গে একটু শ্রদ্ধা, ভক্তি না মিশালে সে ভালবাসাও দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সত্যিকারে ভালোবাসুন, আপনিও সুখী হবেন।
নিজে অসুখী হয়ে অন্যকে ভালোবেসে সুখী করা যায়না। কেউ আপনার জীবনে সুখ এনে দেবে ভেবে কারো সাথে প্রেমে জড়াবেন না। বরং আপনি কারো জীবনে সুখ এনে দেবেন ভেবে ভালোবাসুন। ভালোবাসা দেওয়ার জিনিস, নেওয়ার জিনিস নয়। ইংলিশ লেখক টেনিসন বলেছিলেন, “ভালবাসা যা দেয় তার চেয়ে বেশী কেড়ে নেয়।” আপনি যদি ভালোবাসা দেওয়ার চেয়ে ভালোবাসা পাওয়াতে বেশি সুখ পান, তাহলে আপনি এখনো ভালোবাসার গভীরে যেতে পারেননি। গভীর ভালোবেসে যে সুখ পাওয়া যায় তার সাথে প্রায় অন্য কোনো সুখের তুলনা চলেনা! মার্কিন লেখক জর্জ চ্যাপম্যান এর কথায় “ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।” ভালোবাসার সাথে প্রত্যাশার (expectation) কোনো সম্পর্ক নাই। সত্যিকারের ভালোবাসা শুধু ভালোবাসার মানুষটিকে সুখী করতে চায়, তার থেকে কোনো প্রতিদান আশা করে না। প্রত্যাশার চাপ আস্তে আস্তে ভালোবাসাকে মেরে ফেলে। আপনার ভালোবাসার মানুষটি আপনার প্রত্যাশা পূরণের মেশিন নয়।
“যে ভালোবাসা পেল না, যে কাউকে ভালোবাসতে পারল না, সংসারে তার মতো হতভাগা কেউ নেই”… ভালবাসা মানে কাউকে জয় করা নয় বরং নিজেই কারো জন্য হেরে যাওয়া। সত্যিকারের ভালোবাসা মানুষকে মুক্ত করে, বেঁধে ফেলে না। মানুষ কত ত্যাগ স্বীকার করে ভালোবাসার মানুষকে পাবার জন্য। আবার এই ভালবাসার জন্য মূল্যবান অনেক কিছুই হারায়, যার জন্য বিন্দুমাত্র আফসোস ও কখনো হয় না। ভালোবাসার পরিধি মহাবিশ্বের মতোই বিশাল। ‘ভালোবাসা’ নামক বস্তুটিতে যতটা আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়, তা আর অন্য কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়। আর এই আত্মতৃপ্তির পরিপূর্ণ স্বাদ আপনি তখনই পাবেন, যখন এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও তার সৃষ্টিকে আপনি নিঃস্বার্থভাবে মনঃপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে পারবেন। ভালোবাসা হচ্ছে এমন যখন কেউ আপনার হৃদয় ভেঙ্গে দেয়, আর সবচেয়ে আবাক বিষয় হচ্ছে- আপনি সেই হৃদয়ের প্রতিটি ভাঙ্গা টুকরো দিয়ে তাকে ভালবাসেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, “আমি তোমাকে অসংখ্যভাবে ভালবেসেছি, অসংখ্যবার ভালবেসেছি, এক জীবনের পর অন্য জীবনেও ভালবেসেছি, বছরের পর বছর, সর্বদা, সবসময়” পৃথিবীতে ভালোবাসা না পেয়ে হয়ত বেঁচে থাকা যায়, কিন্তু ভালো না বেসে বোধকরি বেঁচে থাকা যায় না। ভালবাসা এমন একটি প্লাটফরম যেখানে সব মানুষ দাড়াতে পারে। বিশ্ববিখ্যাত লেখক কিটস্ বলেছিলেন “যে ভালোবাসা পেল না, যে কাউকে ভালোবাসতে পারল না, সংসারে তার মতো হতভাগা কেউ নেই”। কেউ যদি তোমার ভালবাসার মূল্য না বুঝে তবে নিজেকে নিঃস্ব ভেবনা। জীবনটা এত তুচ্ছ না। কেউ তোমাকে পছন্দ করবে এই আশায় নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলো না। তুমি যেমন আছ তেমনই থাকার চেষ্টা কর। যে তোমাকে সত্যিকার অর্থেই ভালবাসবে, সে সত্যিকারের তোমাকেই ভালবাসবে। জীবন যেমন একটা ফুল, আর জীবনের ভালোবাসা হলো মধু স্বরূপ। জীবনকে ভালোবাসো, মধু আহরণ করো। টমাস ফুলার এর ভাষায়- “ভালোবাসতে শেখো, ভালোবাসা দিতে শেখো, তাহলে তোমার জীবনে ভালোবাসার অভাব হবে না।”
খুব তুচ্ছ কারনে যে কারো প্রতি ভালোলাগা তৈরি হতে পারে। কোন মেয়ের ভূবন ভুলানো হাসি দেখে এক মুহুর্তেই তাকে ভালো লেগে যেতে পারে। কিংবা রাস্তায় চলতে ফিরতে সুন্দরী কোন মেয়েকে এক পলক দেখেই যে কোন ছেলের হার্টবিট মিস হয়ে যেতে পারে। অথবা কোন ছেলে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে, কিংবা গিটার বাজিয়ে, গান শুনিয়ে কোন মেয়েকে মুগ্ধ করে দিতে পারে। আর তাতে ছেলে অথবা মেয়েটার প্রতি একধরনের অনুভূতি তৈরি হয়। এই অনুভূতিগুলোকে আসলে ভালোলাগা বলে। ভালোবাসা নয়। ভালোবাসা এত সহজে হয়না। একজন মানুষের জন্য ভালোবাসা তৈরী হয় খুব ধীরে ধীরে। চাইলেই যে কাউকে ভালোবাসা যায়না। চাইলেই যে কাউকে ভালোবাসি বলা যায়না। চাইলেই সব ছেড়ে ছুঁড়ে কেউ একজনের হাত ধরে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করেনা। চাইলেই কেউ একজনের জন্য পুরো পৃথিবীর বিপক্ষে চলে যাওয়া যায়না। চোখ বন্ধ করে যার উপর নির্ভর করা যায়, তাকেই ভালোবাসা যায়। বেশিরভাগ মানুষই ভালো লাগা এবং ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য বের করতে পারেনা।
“হঠাৎ করে পাওয়া সুখ, আর হঠাৎ করে আসা ভালোবাসা; এই দুটো জিনিসের মধ্যে অনেক মিল। কারন-দুটো জিনিসই বেশির ভাগ সময় ক্ষণস্থায়ী হয়।” যেমনই হঠাৎ করে আসে, তেমনই হঠাৎ করে জীবন থেকে হারিয়ে যায়। মাঝে শুধু রেখে যায় কিছু ভুলতে না পারার মতো স্মৃতি। ভালোবাসা মানে পরস্পরকে বুঝতে পারা। আমি যে মানুষটিকে ভালোবাসব তাকে যদি না বুঝতে পারি তাহলে এই ভালোবাসার কোনো অর্থ আছে বলে মনে হয় না। এই ভালোবাসায় সুখেরও লেশ থাকেনা। মুখে মুখে সবসময় ভালোবাসি ভালোবাসি বলার চেয়ে আমার মনে হয় ভালোবাসার মানুষটাকে বুঝতে পারাটা অনেক বড় ব্যাপার। ভালোবাসা বেঁচে বা টিকে থাকে পরস্পরের বিশ্বাসে। যে প্রেমে বিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেয়, সেখানে হয়ত প্রেম থাকে না, থাকে সামাজিকতাকে রক্ষা। ভালোবাসা মানে সম্পর্ক, মনে মনে বিশ্বাসের ভিত্তি। ভালবাসা ভালবাসাই, এবং এর অনুভুতি সবসময়ের জন্য একই। সত্যিকার বেদনাও মানুষকে আনন্দ দিতে পারে, দিতে পারে মনের মানুষকে নিয়ে গর্ব করার সুখময় সুযোগ। আর এই আনন্দই দুটি মানুষকে করে আরো রঙ্গিন, ভালবাসাকে করে আরো পরিণত।
মনখুলে ভালোবাসুন, ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে রাখুন। ভালোবেসে সুখে থাকুন।