ঔষধী গাছ হরীতকী

হরীতকী একটি বৃহদাকার চিরসবুজ বৃক্ষ। হরীতকী ত্রিফলার অন্যতম ফল। ভেষজ চিকিৎসকরা  হরীতকী গাছকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। তাদের মতে, মানুষের কাছে এ গাছ মায়ের মতোই আপন। মানুষের শরীরে সংক্রামিত প্রায় সব রোগ-ব্যাধির ওষুধ হিসেবে হরীতকীর ব্যবহার রয়েছে। হরীতকী ফলের গুঁড়া অর্শরোগে, রক্তার্শে, চোখের রোগ, পিত্তবেদনা, গলার স্বর বসে যাওয়া, হৃদরোগ, বদহজম, আমাশয়, জন্ডিস, ঋতুস্রাবের ব্যথা, জ্বর, কাশি, হাঁপানি, পেটফাঁপা, ঢেঁকুর ওঠা, বর্ধিত যকৃত ও প্লীহা, বাতরোগ, মহৃত্রনালীর অসুখ, ফুসফুস, শ্বাসনালীঘটিত রোগে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া হরীতকী ঘন ঘন পানির তৃষ্ণা কিংবা বমি বমিভাব কাটাতেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ত্রিফলা অর্থাৎ আমলকী, বহেরা, হরীতকী এর প্রতিটির সমপরিমাণ গুঁড়ার শরবত কোলেস্টেরল অর্থাৎ প্রেসার বা রক্তচাপ কমানোর মহৌষধ। একে ঔষুধ গবেষক দলের মতে, আধুনিক যে কোনো অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের তুলনায় ত্রিফলা কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি ফলপ্রসহৃ। তাদের মতে, হরীতকীই সর্বশ্রেষ্ঠ। দ্বিতীয় স্থানে আমলকী এবং তৃতীয় স্থানে বহেরা। ত্রিফলা শুধু কোলেস্টেরলই কমায় না বরং এতে প্লীহা ও যকৃতের উপকার হয়। এছাড়া হরীতকীর কাঠ আসবাবপত্র, কৃষি যন্ত্রপাতি ছাড়াও নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। হরীতকীর ফল থেকে ট্যানিন, লেখার কালি ও রং পাওয়া যায়। বিভিন্ন রোগ উপষমে হরীতকী খুব উপকারী। হরীতকী বললেই ত্রিফলার কথা আসে। ত্রিফলা মানে তিনটি ফলের সমাহার। এই তিনটি ফল হলো: আমলকী, হরীতকী ও বহেড়া। এই তিনটি ফলের মধ্যে হরীতকীর রয়েছে অসাধারণ গুণ। হরীতকীর ফল পাক ধরলে হলুদাভ সবুজ বর্ণ ধারণ করে এবং চিবুলে তিতকুটে লাগে। ফলের কোনো কিছু ফেলনা নয়। বীজের ভেতরের শাঁসও মজা করে খাওয়া যায়। হরীতকী ভেষজ গুণসমৃদ্ধ। আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে ত্রিফলা ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও কলেরা ও আমাশয় নিরাময়ে এর যথেষ্ট ব্যবহার রয়েছে। হরীতকী গুড়া ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে পিত্তশূল দূর হয়। পাইলস, হাঁপানি, চর্ম, ক্ষত, কনজাংটিভাইটিস রোগেও হরীতকী ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য গুণাগুণের কারণে বাংলার প্রায় অনেক বাড়ির আঙিনায় নিমের পাশাপাশি মানুষ হরীতকীর গাছ লাগায়। এমনকি সরকারও বনায়ন কর্মসূচির আওতায় রাস্তার পাশে হরীতকী রোপণে মনোনিবেশ করেছে।

হরীতকীর গুণাবলি :

আয়ুর্বেদিক বিজ্ঞানে ত্রিফলা নামে পরিচিত তিনটি ফলের একটি হরীতকী। এতে নানা গুণ আছে। এর স্বাদ তিতা। এটি ট্যানিন, অ্যামাইনো এসিড, ফ্রুকটোজ ও বিটা সাইটোস্টেরল-সমৃদ্ধ।

ব্যবহার:

হরীতকী দেহের অন্ত্র পরিষ্কার করে এবং একই সঙ্গে দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে। এটা রক্তচাপ ও অন্ত্রের খিঁচুনি কমায়। হৃৎপিণ্ড ও অন্ত্রের অনিয়ম দূর করে। হরীতকীতে অ্যানথ্রাকুইনোন থাকার কারণে রেচক বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হরীতকী। অ্যালার্জি দূর করতে হরীতকী বিশেষ উপকারী। হরীতকী ফুটিয়ে সেই পানি খেলে অ্যালার্জি কমে যাবে। হরীতকীর গুঁড়া নারিকেল তেলের সঙ্গে ফুটিয়ে মাথায় লাগালে চুল ভালো থাকবে। হরীতকীর গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। দাঁতে ব্যথা হলে হরীতকী গুঁড়া লাগান, ব্যথা দূর হবে। রাতে শোয়ার আগে অল্প বিট নুনের সঙ্গে ২ গ্রাম লবঙ্গ বা দারুচিনির সঙ্গে হরীতকীর গুঁড়া মিশিয়ে খান। পেট পরিষ্কার হবে।

Leave a Reply

Main Menu